স্বামীর প্রাণ বাঁচাতে কিডনি দিলেন স্ত্রী, সুস্থ হয়ে স্বামী জড়িয়ে পড়লেন পরকীয়ায়

Staff Reporter Published: 08 জুলাই 2025 18:07 পিএম

ছবি : সংগৃহীত

প্রাণ বাঁচাতে স্ত্রী নিজের একটি কিডনি দান করেছিলেন স্বামীকে। সেই স্বামী সুস্থ হয়ে ওঠার পর জড়িয়ে পড়েন পরকীয়ায়। শুধু তাই নয়, স্ত্রীকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে পরকীয়া প্রেমিকার সঙ্গে বসবাস শুরু করেন।

ঘটনাটি ঘটেছে ঢাকার সাভার উপজেলার সদর ইউনিয়নের কলমা এলাকায়।

ভুক্তভোগী স্ত্রী উম্মে সাহেদীনা টুনি এই ঘটনায় স্বামী মোহাম্মদ তারেক-এর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন ও যৌতুকের মামলা করেছেন। অভিযুক্ত তারেককে গ্রেপ্তার করা হলেও বর্তমানে তিনি জামিনে রয়েছেন এবং পলাতক বলে জানা গেছে।

২০০৬ সালে পারিবারিকভাবে তারেক ও টুনির বিয়ে হয়। এক বছর পর জন্ম হয় তাঁদের ছেলে আজমাইন দিব্য। কিন্তু ২০০৮ সালে তারেক গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে ধরা পড়ে, তাঁর দুটি কিডনিই বিকল হয়ে গেছে। চিকিৎসকের পরামর্শে শুরু হয় ডায়ালাইসিস, পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ভারতে নিয়ে যান টুনি।

কয়েক বছর পর চিকিৎসকরা জানান, কিডনি প্রতিস্থাপনই একমাত্র উপায়। তখন টুনি স্বেচ্ছায় নিজের একটি কিডনি স্বামীকে দান করেন। ২০১৯ সালের ২৬ অক্টোবর দিল্লির অ্যাপোলো হাসপাতালে সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়।

টুনি জানান, স্বামীর চিকিৎসার খরচ জোগাতে তিনি বাড়িতে বিউটি পার্লার ও বুটিকসের কাজ শুরু করেন। মাসে ৪০-৫০ হাজার টাকা আয় করলেও প্রায় সবটাই ব্যয় করতে হতো চিকিৎসায়। জমানো টাকা ও স্বর্ণালংকার বিক্রি করে বছরে তিনবার করে স্বামীকে ভারতে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যেতেন, যাতে ২-৩ লাখ টাকা ব্যয় হতো।

কিন্তু অপারেশনের পর থেকেই তারেকের আচরণ পাল্টে যেতে থাকে। ছোটখাটো কারণে রূঢ় আচরণ শুরু করেন তিনি। পরবর্তীতে এক তালাকপ্রাপ্তা নারীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ বিষয়ে প্রতিবাদ করলে টুনির উপর শুরু হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।

টুনি অভিযোগ করে বলেন, “আমি তাকে বাঁচাতে নিজের কিডনি দিয়েছি, অথচ সে এখন আমাকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে।”

টুনি প্রথমে গত ২ ফেব্রুয়ারি সাভার মডেল থানায় একটি অভিযোগ করেন, তবে তারেক মুচলেকা দিয়ে সেটি মিটিয়ে নেন। কিন্তু নির্যাতন বন্ধ না হওয়ায় ২২ এপ্রিল তিনি আদালতে যৌতুক ও নারী নির্যাতনের মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে তিনি বাবার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।

টুনির মা বলেন, “আমার মেয়ের জীবনের সব কিছু সে স্বামীর জন্য ত্যাগ করেছে। আজ সে অবহেলিত। আমরা আদালতের কাছে তারেকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই, যাতে আর কোনো মেয়েকে এমন নির্মম পরিণতি ভোগ করতে না হয়।”

জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর থেকে তারেক পলাতক রয়েছেন। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। তারেকের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কেউ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

মা/ম

Please share your comment:

Related